ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ , ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মেধাবী তুষারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত: অর্থের অভাবে রাবিতে আইন পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা

আপলোড সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ১০:৫৭:২৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ১০:৫৭:২৬ অপরাহ্ন
মেধাবী তুষারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত: অর্থের অভাবে রাবিতে আইন পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা
চরম দারিদ্র্যের চাদরে মোড়া এক জীবন। যেখানে প্রতিদিনই চলে বেঁচে থাকার লড়াই।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ধুলোট গ্রামের সন্তান তুষার চন্দ্র রায় সেই লড়াইয়ের নাম, যে সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে মেধা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে সঙ্গী করে উচ্চশিক্ষার পথে হাঁটছে।

বাবা উপেন্দ্রনাথ রায় যখন মারা যান, তুষার তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। হঠাৎ করেই সংসারের ভরসা হয়ে উঠেন মা। দুই সন্তানকে নিয়ে শুরু হয় সংগ্রামের নতুন অধ্যায়। মা এখন দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। খাবারের অভাব ছিল প্রতিদিনের বিষয়, তবুও তুষার বই ছাড়েনি।

তুষারের চোখে ছিল একটাই স্বপ্ন—উচ্চশিক্ষিত হয়ে দেশের সেবা করা। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে সে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশের ৫টি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে, যা তার সাহসিকতা ও মেধার জীবন্ত প্রমাণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে তুষারের মেধাতালিকায় অবস্থান,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে ৪৩তম,হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে  (হাবিপ্রবি) ১১তম,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২৫তম,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪০তম,গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ১১৫৪তম।


শেষ পর্যন্ত তুষার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু এখানেই থেমে নেই সংকট। ভর্তির খরচ কোনোরকমে জোগাড় হলেও সামনের দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা এখন সবচেয়ে বড় বাঁধা।

তুষার জানায়,“বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমাদের সংসারে অভাব যেন নিত্যসঙ্গী। এসএসসি’র পর প্রায় পড়াশোনা ছেড়েই দিচ্ছিলাম। তখনই জীবনে আশীর্বাদের মতো আসেন ‘ভিক্টোরি প্লাস বিশ্ববিদ্যালয় ও নার্সিং ভর্তি কোচিং, বীরগঞ্জ’-এর পরিচালক সোহেল রানা ভাই। তিনি শুধু অনুপ্রেরণা দেননি, আমার পড়াশোনার সব দায়িত্বও নিয়েছেন।”


তুষারদের বাড়িতে থাকার জায়গা বলতে আছে একটিমাত্র বাঁশের বেড়ার ছোট ঘর। সেখান থেকেই সে তৈরি করছে নিজের ভবিষ্যৎ, দেশের জন্য একজন দক্ষ আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন।

ভিক্টোরী কোচিং এর পরিচালক সোহেল রানা বলেন,“তুষার আমাদের বীরগঞ্জের গর্ব। সে প্রমাণ করেছে সুযোগ পেলে গ্রামের মেধাবীরাও বিশ্ব জয় করতে পারে। আমি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানাই—তুষারের মতো অমিত সম্ভাবনাময় তরুণদের পাশে দাঁড়ান। ও থেমে গেলে আমরা সবাই ব্যর্থ হবো।”

পাল্টাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেন,“তুষার আমাদের ইউনিয়নের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। সীমাহীন দারিদ্র্যেও সে যেভাবে লড়াই করে আজকের জায়গায় এসেছে, তা সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। আমি চাই উপজেলা প্রশাসন এবং সমাজের সচেতন মানুষজন তার পাশে দাঁড়ান।”


বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন,
 “তুষার একজন উদাহরণ। তার মতো মেধাবীরা দেশের সম্পদ। আমরা ইতোমধ্যে তার ব্যাপারে জেনেছি এবং খোঁজ নিচ্ছি কীভাবে তাকে আরও সহায়তা করা যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, তার শিক্ষাজীবন যেন অর্থাভাবে থেমে না যায়, আমরা সেই চেষ্টা করবো।”

তুষারের সাথে যোগাযোগের নম্বর- ০১৭৫০২৭৫১৯১

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ